ইমরান হোসেন, কেশবপুর:
যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী কপোতাক্ষ নদের বুকে তৈরী করা হয়েছে কেশবপুর উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সংযোগ সাঁকো। দু’পারের এলাকাবাসী মিলে নিজেদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি সাঁকোটিতে পারাপার হয় দৈনিক ১০ গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। বর্তমানে সেই বাঁশের সাঁকোটিও এখন যাতায়াতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী স্থানীয় ও উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নিকট দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রাণের দাবী জানালেও কোন আশার আলো দেখেনি আজও। সাঁকো দিয়ে পারাপাররত একজন পথচারী জানান, মাঝে মধ্যে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও মোটর চালিত ভ্যান পারাপারের সময় নদীতে পড়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো দিয়ে কেশবপুর উপজেলার পুরনো ত্রিমোহিনী বাজারের চারপাশে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, ফাজিল মাদরাসা ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রীরা লেখাপড়া করতে আসে। এছাড়াও রয়েছে একটি সোনালী ব্যাংকের শাখা। এ বাজারে কেশবপুর উপজেলার চাঁদড়া, বেগমপুর, মির্জানগর, সাতবাড়ীয়া, বরণডালি এবং কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া, যুগিখালী, সলিমপুর ও কামরালী গ্রামের মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যাদী এনে বিক্রি করে। ত্রিমোহিনী বাজারে ১৮৫টি দোকান রয়েছে। নদের ওপারে কলারোয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেকেই এ বাজারে ব্যবসা করে। তা ছাড়া দু’পারের কৃষকের কৃষিপণ্যের বেশির ভাগই বিক্রির জন্য এ বাজারে আনা হয়। কলারোয়ার চার গ্রামের মানুষ কপোতাক্ষ নদের ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াতসহ হাঁটবাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা—নেওয়া করে। সাঁকোর ওপর দিয়ে বিভিন্ন মালামাল আনতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। তা ছাড়া স্কুল—কলেজের ছাত্র—ছাত্রীদেরও সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা—যাওয়া করতে হয়। ঝুকিপূর্ণ বাসের সাঁকো নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। বাজারটি অনেক পুরনো হলেও কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস আজও মেলেনি, এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ত্রিমোহিনী বাজার কমিটির সভাপতি বলেন, বাঁশের সাঁকোটি এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে শ্রম ও অর্থ দিয়ে তৈরি করেছে। সেটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। জীবনের ঝুঁকির ভেতর দিয়েই এলাকার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ত্রিমোহিনী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল বাসার বলেন, কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে সহজে ওপারের শিক্ষর্থীদের এপারে এসে লেখাপড়া করতে সুবিধা হবে। এ বিষয়ে ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদের ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবী করে আসছে। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণের পাশাপাশি সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান। উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী কর্মকর্তা বলেন, ত্রিমোহনীর কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করার বিষয় নিয়ে মাপযোগ করা হয়েছে অনেক বার। কিন্তু যশোর—সাতক্ষীরার দুই জেলার রশি টানা টানিতে বাধাগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। কপোতাক্ষর নদের উপর একটি সেতু নির্মিত হলে কেশবপুর ও কলারোয়া উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। এলাকাবাসি ওই সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।