তন্ময় মিত্র বাপী, ব্যুরো প্রধান,কেশবপুর
যশোরের কেশবপুরের শান্তি পুর্ণ ভাবে চলে আসা ছাত্রজনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে কতিপয় নামধারি আওয়ামী লীগের চিহ্নিত কতিপয় সন্ত্রাসীরা নিরীহ দু বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম অটল ও জাহাঙ্গীর আলম পলাশকে চাপাতি ও লোহার রড দিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা চালায়। এরপরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত ৪ আগষ্ট এ ঘটনা ঘটার পর গোটা কেশবপুর শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে দূর্বৃত্তরা ১০ টি সরকারি দপ্তর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের অফিস,কেশবপুর প্রেসক্লাব, পৌরসভার ভবন,ডাকবাংলোয় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় উপজেলা ব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে, ছয়টি সরকারি কার্যালয়ের সব নথিপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরদিন ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর খবরে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। লুট হওয়া মালামাল ফিরে পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে চলছে মাইকিং। আতঙ্কে শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪ দিন ধরে বন্ধ ছিল। কেশবপুরের একজন প্রভাব শালী জনপ্রতিনিধি প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন কে সমথর্ন দিয়ে আবার পরদিন আওয়ামীলীগ এর পক্ষ নিয়ে তার অনুসারী কাউন্সিলর কবীর এর নেতৃত্বে নিরিহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপর হামলা চালায়। এর জের ধরে উপজেলা পরিষদে ঢুকে ইউএনও‘র বাসভবনসহ কার্যালয় ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের দুটি কক্ষ, উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সবকটি কক্ষ, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের তিনটি কক্ষ, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সবকটি কক্ষ, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের দরজা, জানালা, চেয়ার, টেবিল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভাঙচুর করে মালামাল লুট করা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্যালয়, যুব উন্নয়ন কার্যালয়, সমবায় কার্যালয়, আনসার ভিডিপি কার্যালয়, পরিসংখ্যান কার্যালয় ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের। ইউএনও‘র কার্যালয়ের ছয়টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, পাঁচটি ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন, মাল্টিমিডিয়ার প্রজেক্টর, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর, লুটপাটসহ আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ৮ হাজার ৩০০ টাকা, মৎস্য কার্যালয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার, সমাজ সেবার ২৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের ১ হাজার ৩০০ চাকরিজীবী ও ১ হাজার ৩০০ জন অবসর ভাতা গ্রহণকারীর সার্ভিস বুক, সমাজ সেবার ৩০ হাজার লোকের ভাতারনথিপত্র, সাংবাদিক দিলীপ মোদকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে।
সমাজ সেবা অফিসে বেসরকারি সংস্থার রেজুলেশনসহ কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। একই সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের ব্যবহৃত তিনটি গাড়িসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৭টি মোটর সাইকেল ও সেবা গ্রহীতার ৭৩টি মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দূর্বৃত্তরা কেশবপুর পৌরসভা ভবনের সকল কক্ষ লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে সকল নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় লুটপাট, ভাঙচুর করে। কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ।
কেশবপুর প্রেসক্লাবে হামলা ভাংচুর চেয়ারে আগুন ও তিনটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা, শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের চালের আড়ৎ, সাধন কুন্ডুর চালের আড়ৎ, লোটো শো রুমের মালিক অহিদুজ্জামান, কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন মিন্টুর ব্যবসা, পাঁজিয়ার বিকাশ পালের গোডাউন, পলি জুয়েলার্কস এর মোটর সাইকেল অগ্মি সংযোগ করে। পক্ষে ১০টি দোকানপাট ব্যাপক ভাঙচুর, মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। উপজেলা ব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধরের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। এরমধ্যে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর ইবাদত সিদ্দিকী বিপুল, যুবলীগের যুগ্ম আবহাবায়ক আবু সাঈদ লাভলু ও পাঁজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জসিমউদ্দীনের বাসভবনসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট করে। গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবের বাসভবনে হামলা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সামাল দিতে সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অপরদিকে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মানুষের ভিতী কমাতে মন্দির ও পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসান যা অব্যাহত রয়েছে। পৌরসভাসহ কমপক্ষে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, সরকারিভাবে কার্যালয় পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তাদের দাপ্তরিক কাজ বিকল্প জায়গায় করতে হবে। দপ্তরের কাজ চলছে উপজেলা সার্ভার স্টেশনে। হিসাবরক্ষণ ও মৎস্য অফিসের কাজ চলছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে, একটি টিনসেড ভবনে চলছে সমাজ সেবার কাজ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাজ, মাধ্যমিকের কাজ চলছে মধু শিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।