খান আরিফুজ্জামান(নয়ন) ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি :
সমন্বিত কৃষি ইউনিট, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে এবং নবলোক পরিষদ এর বাস্তবায়নে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে নিরাপদ সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব আধুনিক পদ্ধতি। মালচিং এসেছে মালচ শব্দ থেকে যার অর্থ হচ্ছে মাটি ঢেকে দেয়া। বর্তমানে লাভজনক এই পদ্ধতিতে খুলনার ডুমুরিয়ার বরাতিয়া গ্রামে উচ্চমূল্যের ও উচ্চ ফলনশীল ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সরকার মালচিং পেপারের দামের ব্যাপারে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এলে একদিন পরিবেশবান্ধব এই মালচিং পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি চাষ জেলাজুড়ে বিস্তার লাভ করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের মাঠে মালচিং পেপারে চাষ করা হচ্ছে বরবটি, লাউ, চিচিঙ্গা, পেঁপেসহ নানা রকমের উচ্চ মূল্যের সবজি। এমন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য চাষীরাও ফসল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। মূলত রবি মৌসুমে জমিতে পানির স্বল্পতা থাকায় এই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে কৃষকরা অল্প পরিমানে সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক ব্যবহার করে ফসলের দ্বিগুন উৎপাদন পেয়ে লাভবান হওয়ায় বরাতিয়াসহ ডুমুরিয়া উপজেলার অনেক কৃষকরা নবলোক পরিষদে কৃষি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ও সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বর্তমানে নবলোক এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ১২ জন কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে প্রায় ৩ একর জমিতে উচ্চমূল্যের ও উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন। এছাড়া আরও ৫-৭ জন কৃষক নিজ উদ্যোগে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। মালচিং পদ্ধতিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ সবজি অপরদিকে দূষনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। প্রতিনিয়তই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ কৃষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের বরবটি চাষী হাসিনা বেগম জানান, তিনি ইউটিউবে এই মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর স্বামীসহ নবলোক পরিষদে কৃষি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে ২৫শতক জমিতে বরবটি চাষ করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতি কেজি ২৫টাকা থেকে ৩৫টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ২০ মন বরবটি বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে খরচ অনেক কম হওয়ার কারণে তুলনামূলক ভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই আগামীতে তিনি আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজি চাষ করবেন। একই এলাকার আরেক চাষী মনোয়ারা বেগম বলেন, তিনিও নবলোক পরিষদ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে বরবটি,লাউ ও চিচিঙ্গা চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে ফলনও বেশি পাওয়া সম্ভব। তাই এই সিজনে তিনি মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্যান্য আরও ফসল চাষ করবেন বলে জানান। নবলোক পরিষদের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, পিকেএসএফ এর আর্থিক সহায়তায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি বাণিজ্যকরণ পদ্ধতি হিসেবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, কৃষকরা যেন কম সময়ে, কম পরিশ্রমে ও অল্প খরচে দামী ফসলগুলো চাষ করে দ্বিগুণ পরিমাণ নিরাপদ সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে অধিক লাভবান হতে পারেন মূলত সরকারের সেই পদক্ষেপকে বাস্তবায়ন করতেই পিকেএসএফ এর অর্থায়নে এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে নবলোক পরিষদ। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের ফলাফল অনেক ভালো হওয়ার কারণে প্রতিদিনই আগ্রহী কৃষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুতই এলাকাজুড়ে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, সবজি চাষের উপজেলা হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকদের কাছে এই মালচিং পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দেশের কৃষি ও কৃষকদের আধুনিকরন করতে এমন উন্নত কৃষি প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। তাই সরকারের পাশাপাশি নবলোক এর মতো অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো যদি দেশের কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে দেশের কৃষিকে অল্প সময়ে আরো অনেকদূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।